চন্দন বারিক, দিঘাট্রিপ.কম : লকডাউনের গেরোয় আচমকাই ঘনঘটা নেমে এসেছিল সৈকত নগরী দিঘায়। যে দিঘা শহর প্রতিনিয়ত সরগরম থাকত পর্যটকের ভীড়ে তা রাতারাতি শুনশান হয়ে যায়। ট্রেন এলেই স্টেশনের বাইরে থাকা ভ্যান রিক্সা চালক থেকে হোটেলের ভেন্ডার বা হোটেল ব্যবসায়ীদের মধ্যে রীতিমতো হুড়োহুড়ি পড়ে যেত। তবে করোনাকালে অনেক খারাপ অবস্থার সম্মুখিন হতে হয় এখানকার পর্যটন ব্যবসায় যুক্ত সমস্ত মানুষকেই। অবশেষে রাজ্য ও রেলের সহমতে পুনরায় চালু হয়েছে দিঘা গামী লোকাল ট্রেন চলাচল।
পূর্ব সূচী অনুযায়ী এদিন সকাল ৫.৪৫টা নাগাদ দিঘা থেকে পাঁশকুড়ার উদ্দেশ্যে প্রথম লোকাল ট্রেন ছেড়ে বেরিয়ে যায়। আর বেলা ১০.৫৭টায় মেচেদা থেকে প্রথম লোকাল ট্রেন দিঘায় এসে পৌঁছেছে। মিডিয়ার সৌজন্যে অনেকেই ইতিমধ্যে দিঘা লোকাল ট্রেন চলাচলের খবর পেয়ে গিয়েছেন। তবে মেচেদা ও পাঁশকুড়া থেকে দিঘা গামী ট্রেন চলাচল শুরু হলেও হাওড়া থেকে দিঘা লোকাল বা তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস না চলায় কলকাতা ও শহরতলির পর্যটকদের ধাতস্থ হতে এখনও কিছুটা সময় লাগবে বলেই মনে করছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এদিন প্রথম লোকালে চড়ে দিঘায় এসে পৌঁছেছেন সাঁতরাগাছি’র বাসিন্দা মুক্ত সরকার। তিনি জানিয়েছেন, লোকালে চড়ে দিঘায় এসে ভীষণ খুশি তিনি। প্রতিটি স্টেশনে যথেষ্ট সুরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে বলে দাবী তাঁর। ট্রেনের ভেতরে একটি করে আসনে লাল ক্রস চিহ্ন দিয়ে যাত্রীদের মধ্যে সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং বজায় রাখা হয়েছে। এছাড়াও ট্রেনে স্যানিটাইজ করা হয়েছে, স্টেশনেও স্যানিটাইজার স্প্রে দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
হলদিয়া থেকে দিঘায় স্বপরিবারে বেড়াতে এসেছেন পাপিয়া দে। তিনি নন্দকুমার স্টেশন থেকে দিঘা লোকালে চড়ে দীর্ঘদিন বাদে সৈকত শহরে বেড়াতে এসেছেন। তিনি জানান, প্রথম ট্রেনে চড়ে এসেছেন তিনি। বেশ ভালো লাগছে। ভীড় কম থাকায় ট্রেনে যাত্রা খুবই সুন্দর হয়েছে। সুরক্ষা ব্যবস্থা, স্যানিটাইজার সবটারই ব্যবস্থা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। স্টেশনের বাইরের স্থানীয় ভ্যান চালক তরুণ বারিক জানিয়েছেন, লোকাল ট্রেন চালু হওয়ায় তাঁরা অত্যন্ত আনন্দিত। তাঁদের পরিবারে এবার স্বচ্ছলতা ফিরবে। সবাই দু’মুঠো খেতেও পাবেন। আজ যে পরিমানে যাত্রী প্রথম ট্রেনে সফর করে এসেছেন তা মোটের ওপর ভালোই। তবে সুপারফার্স্ট ট্রেন (আগে তাম্রলিপ্ত এক্সপ্রেস চলত) হাওড়া থেকে চালু হলে আরও বেশী পর্যটক দিঘায় আসতে পারবেন বলেই দাবী তাঁর। দিঘার স্টেশনের উল্টো দিকের দিঘাশ্রী স্টলের খাওয়ারের ব্যবসায়ী মিঠু সেনাপতি জানিয়েছেন, ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় ভালোই হয়েছে। এতদিনে রুজিরুটি প্রায় শেষ হয়ে গেছে। আজ ট্রেন আসার পর আবার সবাই ঘুরে দাঁড়ানোর আশা করছে। তবে করোনা আবহে সতর্ক থাকাটাও জরুরী। আগামী দিনে আরও ট্রেন চলুক সেই দাবীই জানাচ্ছি। প্রথম ট্রেনে বেশ ভালো যাত্রী এসেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। দিঘা স্টেশন ম্যানেজার সঞ্জীব কুমার মহাপাত্র জানিয়েছেন, লোকাল চালু হওয়ার আগে মঙ্গলবার রাতেই দিঘা স্টেশন পর্যবেক্ষণে এসেছিলেন কাঁথির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, কাঁথি’র সিআই, দিঘা থানার ওসি সহ রামনগর-১ ব্লকের বিডিও। তাঁরা সম্মিলিত ভাবে স্যানিটাইজ সহ সুরক্ষার দিকগুলি খতিয়ে দেখেছেন। এই মুহূর্তে প্রতিটি ট্রেন স্টেশনে ঢোকার পরেই প্রত্যেক যাত্রীর টেম্পারেচার পরীক্ষা করা হচ্ছে। সব যাত্রীকেই স্যানিটাইজার স্প্রে করা হচ্ছে। ট্রেন থেকে সমস্ত যাত্রী নেমে যাওয়ার পর তবেই নতুন করে যাত্রীদের উঠতে দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে ট্রেনের আসনে দূরত্ব মানার জন্য যে ক্রস চিহ্ন দেওয়া রয়েছে তা সবাই মানছেন কিনা সেদিকেও নজর দেওয়া হচ্ছে।